Voiceofbd24 is loved by 100k+ readers

Thanks everyone for the love of 70k+ readers in voiceofbd24

Breaking News

বছর ঘুরে আবার এলো মাহে রমজান



রমজান মাস,ধর্মপ্রান মুসল্লিদের কাছে বিশেষ এক মাসের নাম।  বাংলা, ইংরেজি মাসের ন্যায় আরো একটা ক্যালেন্ডার গননা করা হয় সেটাকে বলে হিজরি সন। মহানবি (সঃ) এর মদিনা হিজরতের পর থেকেই এই হিজরি সন গণনা শুরু হয়। বাংলা, ইংরেজি গণনায় যেমন ১২ মাস হিসাব করা হয় তেমনি হিজরি গাণনায় ও ১২টি মাস গণনা করা হয় এই বারো মাসের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার মাস হলো মাহে রমজান মাস। এটা ফযিলাতের মাস, গুনাহ মাফের মাস, সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস। মাহে রমজানকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য নেকি অর্জন করার মৌসুম। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা যেমন বিশেষ মওসুমে ভাল ব্যবসা করার জন্য মুখিয়ে থাকে তেমনি ধর্মপ্রান মুসল্লিরাও এই রমযানের অপেক্ষায় থাকে এ মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে ইবাদাতে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

মহান আল্লাহর দেয়া এই রমযান মাসকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয় :—

১)প্রথম দশদিনকে বলা হয় রহমতের দশদিন। 

২)মাঝের দশদিনকে বলা হয়  মাগফিরাতের দশ দিন। 

৩) আর শেষ দশদিনকে নাজাতের দশদিন হিসেবে গণনা করা হয়। 

কিন্তু এই রমজানের প্রতিটি মুহুর্ত প্রতিটিক্ষণই বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। এই রমজানের শেষ দশদিনের যেকোন বিজোড় রাতে একটি রাত পালন করা হয় যা সকলের কাছে লাইলাতুল কদর নামে পরিচিত।পবিত্র কোরআনে এই রাতের ইবাদাতকে  হাজার  রাতের ইবাতদের থেকেও উত্তম বলা হয়েছে।(সুরা কদরঃ ২)


মাহে রমজানের প্রধান আমল হলো ফরজ রোজা। রোজা একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’।

রোজাকে আরবিতে বলা হয় সিয়াম, অর্থ ‘বিরত থাকা’, ‘আত্মসংযম করা’ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ও বিধান দেওয়া হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা:১৮৩).

রমজান মাস আসে মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে। তাইতো রাসুল (সা:) বলেন, রমজান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। (নাসায়ী, আল মুসতাদরাক)

এই মাস মুমিনের অতীতের গুনাহ সমূহকে মুছে দেয়। রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বোখারী ও মুসলিম)


রমজান মাস সহানুভূতির মাস। রমজান মাস এলে রাসূল (সা:) দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি দান সদকা করতে উৎসাহিত করেছেন।

রমজানে কোন রোজাদারকে ইফতার করানোর কারণে অনেক নেকি লাভ হয়। রাসুল (সা:) বলেন, যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে, তবে রোজাদারের নেকি একটুও কমবে না। (তিরমিজি)


রমজান মাসে নফলের বিনিময় ফরজ সমতুল্য এবং একটি ফরজের বিনিময় সত্তরটা ফরজের নেকি দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু মাহে রমজানের রোজা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, রোজা আমার জন্য আর উহার প্রতিদান আমিই দিব। (বুখারী)।একমাত্র রোজার প্রতিদানই আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন। অন্য এক হাদিসে এসেছে রোজাদার ব্যক্তির মুখের ঘ্রান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘ্রাণ।


ফযিলতের মাস এই মাহে রমজানেই সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য হেদায়েতের মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যামিথ্যারপার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারা:১৮৫)

 নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা মাস হলো রমযান মাস । ফলে একজন মানুষ এই রমযান মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়ে ওঠতে পারে। 


পরিশেষে বলা যায়, আসুন সারা পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস নামক মহামারি থেকে মুক্তি পেতে,  নিজেকে নিজের পরিবার, সমাজ থেকে মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, পরনিন্দা, অশ্লীলতা ও সকল খারাপ কাজ পরিহার করে, নিজেকে শুধরে নিয়ে তাকওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মাহে রমজানের ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করি।এবং প্রতিজ্ঞা করি যতদিন বাচবো রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে যেন আল্লাহর পথে চলতে পারি।  আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন, (আমিন)। 


No comments